Subscribe Us

ডিটারজেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ হাতেকলমে। বাড়িতেই ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করুন। কোনো মেশিন ছাড়াই

ডিটারজেন্ট পাউডার মানবসমাজে ব্যবহৃত একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পরিষ্কারক পদার্থ। যা সকল মানুষই ব্যবহার করে থাকে তাদের নিত্য জীবন যাপনে বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিষ্কার করার জন্য । এটি বিশেষত জামা কাপড় পরিষ্কার করার জন্যই বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডিটারজেন্ট পাউডারের বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই প্রোডাক্টটি চাহিদা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন।এটি এমন একটি প্রোডাক্ট যেটি বাজারে চলবেই।

   ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রেসিপি এবং কাঁচামাল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করা যেতে পারে।

Homemade detergent powder making bangla, How to make detergent powder at home, detergent powder bangla process
Homemade detergent powder making bangla process


              তাই খুব কম পুঁজি বিনিয়োগ করে যাতে এই প্রোডাক্টটি  বানানোর  ব্যবসা আপনারা বাড়ি থেকেই শুরু করতে পারেন তার জন্য সমস্ত তথ্য নিচে বর্ণনা করা হলো -


অনুগ্রহ করে কাজ শুরু করার আগে ব্যবহৃত কস্টিক সোডা সম্বন্ধে সতর্কতা বিষয়টি খুব ভালোভাবে পড়ে নেবেন তারপর কাজ শুরু করবেন ।

           SafetyFirst:  সর্তকতা : 

১/ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন প্রটেক্টিভ গুগোলস , রাবার গ্লাভস, নাকের মাস্ক ,রাবার জুতা, সেফটি জ্যাকেট পড়ে নিন ।


২/ কস্টিক সোডা একটি অত্যন্ত ক্ষারীয় পদার্থ যা চামড়ার সংস্পর্শে এলে চামড়া পুড়ে বা কুঁচকে বা ঝলসে যেতে পারে । ব্যবহার করার সময় সদা সতর্ক থাকুন ।


৩/ ভুল করেও কখনো কস্টিক সোডার উপর জল ঢালবে না সদা জলের উপর কস্টিক সোডা  ঢালবেন অন্যথায় এটি বিস্ফোরিত হয়ে আপনার শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে ।


৪/ স্টেনলেস স্টিল ,শক্ত কাঠ এই জাতীয় পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর কিছু ব্যবহার করবেন না ।


৫/কাজটি করার সময় শিশুদের সর্বদায় দূরে রাখুন এবং নির্জন খোলামেলা ঘরে কাজ করুন ।


৬/ কাঁচামালের পরিমাপ এখানে অত্যন্ত নিখুত হওয়া উচিত অন্যথায় সাবান এবং নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে ।


৭/কস্টিক সোডা জলে মেশানোর সময় এক ধরনের গ্যাস নির্গত হয় সেই গ্যাস থেকে চোখ নাক মুখ সর্বদা সুরক্ষিত রাখুন ।


৮/ মিশ্রন ঢালার পর কুড়ি ঘন্টা পর্যন্ত খালি হাতে ধরবেন না । এবং ৫ দিনের আগে ব্যবহার করবেন না।


৯/অ্যালুমিনিয়াম মরিচা ধরা লোহা এবং স্বল্প উষ্ণতায় গলনশীল ধাতব  কোনো কিছু ব্যাবহার করবেন না ।


১০/ কাজ শুরু করার সময় সমস্ত জিনিসপত্র হাতের কাছে রাখুন এবং কাজটি করার আগে সর্তকতা বিষয়টি ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিন।


বিশেষ দ্রষ্টব্য :- প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝে খাতায় লিখে নিন তারপর কাজ শুরু করুন।


   -:ব্যবহৃত সরঞ্জামসমূহ :-


১/ দুটি স্টেনলেস স্টিলের বালতি


২/ তেল গরম করার জন্য স্টেনলেস স্টিলের পাত্র


৩/ উষ্ণতা মাপার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল থার্মোমিটার 


৪/ কাঁচামাল নিখুঁতভাবে পরিমাপ করার জন্য কম্পিউটার  পাল্লা বা ডিজিটাল স্কেল ।


৫/ নাড়া দেওয়ার জন্য দুটি শক্ত কাঠের লাঠি ।


৬/ ভালোভাবে মিক্সার করার জন্য একটি স্টিক ব্লেন্ডার ।


৭/ দুটি দাগ কাটা মাপনী মগ ।

    

কাঁচামাল


4 কেজি ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির

 কাঁচামাল বা উপাদান

মোটামুটি ভালো ধরনের ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করতে গেলে নিচে বর্ণিত অনুপাতে কাঁচামাল প্রয়োগ করে আপনি ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করতে পারেন


ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির উপাদন ও ফর্মূলা:


1) 3 লিটার পিওর ভার্জিন নারিকেল তেল ।


2) 500 গ্রাম কস্টিক সোডা ।


3) 1.5 লিটার মিনারেল বিহীন জল বা পাতিত জল। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ডিসটিল্ড ওয়াটার।


4) 50 গ্রাম সোডিয়াম কার্বনেট ।


5) 250 গ্রাম সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট। যাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় STTP ।


6) 60 গ্রাম সালফোনিক এসিড ।


7) 6 গ্রাম সোডিয়াম পার্বোরেট ।


8) 50 গ্রাম কারবক্সি মিথাইল সেলুলোজ। যাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় CMC ।


9) 125 ml অ্যাক্টিভ অক্সিজেনেট ওয়াটার ।


10 ) 40 ml সিনথেটিক সুগন্ধি ।


এবং

11) পরিমাণমতো সিন্থেটিক কালার চাইলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।


ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবহৃত কোন

 উপাদান বা কাঁচামালের কি কাজ ? 


                উপরিউক্ত কাঁচামাল সমূহের মধ্যে ব্যবহৃত নারিকেল তেল,কস্টিক সোডা এবং পাতিত জল হল ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির মূল উপাদান। উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে- এখানে অন্য তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু সেই তেলের ভিত্তিতে কস্টিক সোডা এবং জলের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।


1)   সোডিয়াম কার্বনেট :
সোডিয়াম কার্বনেট একটি রাসায়নিক যৌগ যার কেমিক্যাল ফর্মুলা হচ্ছে Na2CO3 । এটি কার্বনিক এসিডের একটি ক্ষারীয় লবণ।

             [][] এটি মূলত ডিটারজেন্ট পাউডারে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এটি হার্ড ওয়াটারকে সফট ওয়াটার এ রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে। এটি ডিটারজেন্ট পাউডার যাতে হার্ড ওয়াটার এ ফেনা উৎপন্ন করতে পারে তার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি জামাকাপড় থেকে কাদা-ময়লা পরিষ্কার,অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,এন্টিফাঙ্গাল এজেন্টেরও কাজ করে থাকে ।


2)   সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট : সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট এর ফর্মুলা হচ্ছে Na5P3O10 ।

           [][] সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট ডিটারজেন্ট পাউডার এ ব্যবহার করা হয়ে থাকে মূলত পাউডারের পরিষ্কারক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য । এবং এটি কিছুটা ডিটারজেন্ট পাউডারের ফেনা হতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি অনেক ধরনের প্রোডাক্ট তৈরিতে ময়েশ্চার ধরে রাখতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


3)   সালফোনিক এসিড : সালফোনিক এসিড মূলত ডিটারজেন্ট পাউডার এবং ডিটারজেন্ট সাবান এর একটি মুল ফেনা উৎপন্নকারী এবং পরিষ্কারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

            [][] সালফোনিক এসিড ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রিতে একটি সস্তা সারফেকট্যান্ট এর মধ্যে পড়ে।


4)  সোডিয়াম পারবো রেট : সোডিয়াম পার্বরেট অনেক ধরনের পরিষ্কারক প্রডাক্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় । এটি ডিটারজেন্ট পাউডারের মূলত ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এটি ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্লিচিং পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।


5)   কার্বক্সি_মিথাইল _সেলুলোজ : কার্বক্সি_মিথাইল _সেলুলোজ যাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় CMC ।

               [][] CMC ডিটারজেন্ট পাউডারে জামাকাপড় থেকে নোংরা বের করে আনতে, পাউডারের ফেনাকে দৃঢ় করতে, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং পাউডার এর গুণগত মান বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয়।


6)   অ্যাক্টিভ অক্সিজেনেট ওয়াটার : অ্যাক্টিভ অক্সিজেন ওয়াটার ডিটারজেন্ট পাউডারে ব্যবহার করা হয় যাতে পাউডারের অক্সিজেনের পরিমাণ এবং পাউডারের ব্যবহৃত সুগন্ধি এবং পাউডার এর কোয়ালিটি বজায়  থাকে ।


7)   সুগন্ধি ও কালার : ডিটারজেন্ট পাউডারে সুগন্ধি ও কালার ব্যবহার করা হয়ে থাকে কারণ পাউডারের কালার ও সুগন্ধের অনুভব মানুষকে আকর্ষিত করে তোলে ।





       ডিটারজেন্ট পাউডার

 তৈরির পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপ


   [A] সোডা সলুশন বা সোডা জল তৈরি


সোডা সলিউশন তৈরীর জন্য নিচে দেওয়া পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।


1)   5 লিটারি একটি শক্ত স্টিল বা প্লাস্টিকের বালতি নিয়ে এর মধ্যে 1 লিটার বিশুদ্ধ পাতিত জল ঢেলে নিন ।

ডিটারজেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডিটারজেন্ট পাউডার উপাদান,

2)   এরপর ধীরে ধীরে 500 গ্রাম কস্টিক সোডা ঢালতে থাকুন এবং সাথেই শক্ত কাঠের গোল করা লাঠি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না সোডা জলে ভালোভাবে মিশে যায়।


3)   যখন সোডা জলে ভালোভাবে মিশে যাবে তারপর বাকি হাফ (0.5) লিটার জল মিশিয়ে নিন ।


{**Note : কষ্টিক সোডা জলে মিশানোর সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবেন কারণ সোডা জলে মেশানোর সাথে সাথে 200 ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । 

             [][]সোডা জল আপনার চামড়া সংস্পর্শে আসলে চামড়া কুচকে যেতে পারে এবং অসহ্য যন্ত্রণা হতে পারে। নাকে মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করবেন যাতে এর গন্ধ আপনার নাকে না আসে। চোখে যাতে এর আঁচ না লাগে । }


এবং

4)   1.5 লিটার জল পুরোপুরি মেশানো হয়ে গেলে জলের বালতি টি পাঁচ (৫) ঘণ্টার জন্য ঠান্ডা করার জন্য ঢেকে রেখে দিন যাতে নোংরা না লাগে।


                           [B] মিক্সিং


কসটিক সোডা জল ঠান্ডা হয়ে গেলে এবার মিক্সিং -

ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির উপকরণ, detergent tairir upadan উপাদান

1)    10 লিটারের অন্য একটি বালতিতে 3 লিটার লিকুইড নারিকেল তেল ঢেলে নিন।


2)      এরপর সোডিয়াম কার্বনেট,STTP, সোডিয়াম পার্বরেট, CMC পরিমান মত তেল এর বালটিতে ঢেলে কাঠের লাঠি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন ।


3)    ঠান্ডা করা কস্টিক সোডার সলিউশন ধীরে ধীরে মিশ্রণটিতে ঢালতে থাকুন এবং কাঠের লাঠি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত মিশ্রণটি ঘন আঠালো হচ্ছে । একাজ মিনিমাম একঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ডিটারজেন্ট পাউডার ফর্মুলা, detergent Making at home

4)    এরপর পরিমাণমতো সিন্থেটিক সুগন্ধি অ্যাড করুন এবং তার দশ মিনিট পর অক্সিজেনেট ওয়াটার মিশ্রণটিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন । এটি মিশানোর সময় মিশ্রণটি একটু সাদাটে হবে।


5)    এরপর মিশ্রণটি থেকে আলদা আলদা পরিমাণে তুলে নিয়ে আলদা আলদা সিন্থেটিক কালার পরিমাণমতো এড করুন এবং সেগুলো পাউডার তৈরি হয়ে গেলে একসাথে মিশিয়ে নেবেন।

   [C] ফিনিশিং

উপরে বর্ণিত পদ্ধতিটি অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে ঘন মিশ্রনটিকে কোন শক্ত প্লাস্টিক ফিল্ম ছড়িয়ে দিন এবং খোলামেলা জায়গায় 5 দিনের জন্য রেখে দিন। 5 দিন পর সেগুলো শক্ত হয়ে যাবে  তারপর সেগুলো গুরো করে প্যাকেটে ভরে নিন।

     [][][]এরপর আপনার ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করে দেখুন এবং তারপর আপনার ডিটারজেন্ট পাউডার বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত।


____________________------------------____________________


হাতে কলমে শিখুন সাবান তৈরি । ব্যবসা শুরু করুন

 বাড়ী থেকেই









Post a Comment

0 Comments